৪৬। সূরা আহক্বাফ

সূরা আহক্বাফের শুরুতে বলা হয়, আল্লাহ আসমান জমিনকে যথাযথ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। অপরদিকে মিথ্যা উপাস্যরা কোনো কিছুই সৃষ্টি (শূন্য থেকে অস্তিত্বে আনা) করেনি। দেবদেবীর অস্তিত্বের পক্ষে আসমানী কিতাব বা বুদ্ধিবৃত্তিক কোনো প্রমাণও নেই। রাসূল (সাঃ) যদি মিথ্যা নবী হতেনই, তাহলে আল্লাহই তাঁর কর্মকাণ্ড রুদ্ধ করে দিতেন। আহলে কিতাবদের মাঝে অনেকে ঈমান আনবে এ ভবিষৎবাণী করে মুশরিকদের সতর্ক করা হয়।

কাফিররা পার্থিব বৈভবের কারণে ভাবত সত্যিকার ওয়াহী যদি আসেই, তাহলে তাদের মতো ধনীদের কাছেই আসা উচিত। অথচ আরবি কিতাবে পূর্বেকার ইসরাইলি নবীদের ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণিত হচ্ছে, এটাই রাসূলের (সাঃ) নবুয়তের প্রমাণ। পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার ও শির্ক না করার হুকুম বর্ণিত হয়। কাফিররা তাদের ভোগ্যবস্তু দুনিয়ায় শেষ করে ফেলেছে, আখিরাতে কোনো প্রতিদান পাবে না।

আদ জাতির বর্ণনা দেওয়া হয়। তারা দৃষ্টি, শ্রবণ ও চিন্তাশক্তি কাজে লাগিয়ে তাওহীদ বোঝার চেষ্টা করেনি। আযাবের মেঘ দেখে তারা ভেবেছিল এটা উপকারী বৃষ্টি। এছাড়া আরবের আশপাশের আরো অনেক জাতিরই এমন পরিণাম হয়েছে।

জ্বীনদের একটি দল কর্তৃক কুরআন শোনার ঘটনা বর্ণিত হয়। তারা বুঝতে পারে এটি পূর্বেকার নবীদের নিকট পাঠানো ওয়াহীরই সিলসিলা। তারা নিজ জাতির নিকট ফিরে গিয়ে তাদেরও ইসলামের দাওয়াত দেয়। এখানে এই ঘটনার উল্লেখ করে মক্কার কাফিরদেরকে লজ্জা দেয়া হয়েছে যে, তাদের চাইতে শক্তিশালী ও গর্বিত জাতিও সত্য শুনে ঈমান এনেছে।

৪৭। সূরা মুহাম্মাদ

সূরা মুহাম্মাদের (অপর নাম সূরা ক্বিত্বাল) শুরুতে জানানো হয়েছে যে কাফিরদের ভালো কাজের কোনো প্রতিদান আখিরাতে নেই। আর মুমিনদের গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়।

জিহাদ ও যুদ্ধবন্দী সংক্রান্ত বিধান, সরাসরি আযাব না দিয়ে জিহাদের বিধানের হেকমত ও শহীদের মর্যাদা বর্ণিত হয়।

মুমিনদের জন্য জান্নাতের বর্ণনা দেওয়া হয়। চতুষ্পদ জন্তুর মতো দুনিয়া ভোগ করা কাফিরদের পরিণাম বর্ণিত হয়।

মুনাফিকরা রাসূলের (সাঃ) কথার গুরুত্ব দেয় না। এদের তিরস্কার করা হয়েছে। নিজের ও অন্য মুমিনদের ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য ইস্তিগফার করার হুকুম করা হয়েছে।

অত্যাচারিত হওয়ার সময় জিহাদের বিধানের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকা কিন্তু বিধান আসার পর ভয়ে মূর্ছা যাওয়ার স্বভাবকে তিরস্কার করা হয়। জিহাদবিমুখতার ফলে দুনিয়ায় অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে।

মুনাফিকরা মুসলিম ও কাফির উভয় জাতির কিছু কিছু বিধান মানে। মৃত্যুর সময় এদের ভয়াবহ অবস্থার কথা বর্ণিত হয়।

শত্রুর সামনে হীনবল হয়ে সন্ধি প্রস্তাব দিতে নিষেধ করা হয় (সাধারণভাবে সন্ধি নিষিদ্ধ নয়) এবং জিহাদে সম্পদ ব্যয় করতে বলা হয়। আল্লাহ যদি সমুদয় সম্পদ দাবি করতেন, তাও দিতে তৈরি থাকা উচিত। কিন্তু তিনি অল্পই চেয়েছেন। আল্লাহ অভাবমুক্ত, মানুষ অভাবী। নিজেদের আখিরাতি ফায়দার জন্যই তাই সম্পদ ব্যয় করতে হবে।

৪৮। সূরা ফাতহ

সূরা ফাতহ নাযিল হয় হুদায়বিয়ার ঘটনার আলোকে। হুদায়বিয়া চুক্তিকে আপাতদৃষ্টে অপমানজনক মনে হলেও দুনিয়া ও আখিরাতে যে তা কল্যাণকর হবে, সে কথা বলা হয়। আল্লাহর সর্বব্যাপী ক্ষমতা এবং মুশরিক ও মুনাফিকদের জন্য নির্ধারিত শাস্তির কথা বলা হয়।

উসমান (রাঃ)-কে হত্যার রটনা শুনে সাহাবাগণ প্রতিশোধের জন্য যে শপথ করেন (বায়আতে রিযওয়ান), তার ভূয়সী প্রশংসা করা হয়।

মুসলিমরা কাফিরদের হাতে মরে গিয়ে আর ফেরত আসবে না- এই ভেবে মুনাফিকরা পেছনে রয়ে গিয়েছিল। মুসলিমদের ফিরে আসতে দেখে তারা বলে পরিবার পরিজনের দেখভাল করার জন্য থেকেছিল। গনিমত সংগ্রহের সময় ঠিকই আবার সাথে যেতে চাইবে। এদেরকে দুনিয়ার লাঞ্ছনা ও আখিরাতের শাস্তির কথা বলা হয়। জিহাদে না যেতে পারার বৈধ ওজরসমূহ বর্ণিত হয়।

আল্লাহ সেই বছরের জন্য মুসলিমদের হাতকে মক্কা আক্রমণ থেকে যথাযথ কারণে বিরত রেখেছেন। এতে মক্কায় বসবাসরত মুসলিমরা কোল্যাটেরাল ড্যামেজ হওয়া থেকে বেঁচে যায়। কিন্তু শীঘ্রই যে মুসলিমরা মক্কা, হুনাইন ইত্যাদি বিজয় করে প্রচুর গনিমত এবং আখিরাতের পুরষ্কার পাবে, তার ভবিষৎবাণী করা হয়।

রাসূল (সাঃ) স্বপ্নে দেখেছিলেন তিনি সাহাবিদের নিয়ে উমরা করছেন, কিন্তু সে বছর উমরা না করে ফিরতে হয়। আল্লাহ জানিয়ে দেন স্বপ্নে প্রদত্ত ওয়াহী সত্যই ছিলো, পরবর্তীতে ঠিকই তাঁরা উমরা করবেন।

সাহাবা ও মুমিনগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর, নিজেদের মাঝে দয়ার্দ্র। আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় তাঁরা রুকু সিজদা করেন। তাওরাত ইঞ্জিলেও তাঁদের প্রশংসা করা হয়েছে। তাঁদেরকে দেখে কাফিররা ক্রোধান্বিত হয়।

৪৯। সূরা হুজুরাত

সূরা হুজুরাতের শুরুতে রাসূলের (সাঃ) এর সামনে আওয়াজ উঁচু করা ও তাঁকে বেয়াদবির সাথে ডাকার ব্যাপারে বিধিনিষেধ বর্ণিত হয়েছে।

পাপাচারীর আনীত সংবাদে বিশ্বাস করার আগে যথাযথভাবে যাচাই করতে বলা হয়েছে।

সমস্ত মুসলিম ভাই-ভাই। মুসলিমদের দুটি পক্ষের কলহ বাঁধলে সমাধানের নিয়ম বর্ণিত হয়েছে।

মুসলিমগণের একে অপরকে উপহাস, দোষারোপ, মন্দ নামে ডাকা, ধারণা-অনুমান, গোপন ত্রুটি অন্বেষণ, গীবত নিষিদ্ধ করা হয়। বর্ণ-বংশ-লিঙ্গ দিয়ে নয়, তাকওয়া দিয়ে আল্লাহর নিকট মর্যাদাবান হওয়া যায়।

বেদুইনদের অনেকে মৌখিক কালেমা পড়ে নিজেকে মুমিন দাবি করত। প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয়- ঈমান আনার পর কোনো সন্দেহ না করা ও জানমাল দিয়ে জিহাদ করা।

ইসলাম গ্রহণ করে আমরা আল্লাহর উপকার করিনি,  আল্লাহই আমাদের ইসলাম দান করে অনুগ্রহ করেছেন।

৫০। সূরা ক্বাফ

সূরা ক্বাফে কুরআন মাজীদের কসম করে আখিরাতের ব্যাপারে কাফিরদের আপত্তির জবাব দেওয়া হয়। চারপাশের সৃষ্টিরাজির বর্ণনা দিয়ে বলা হয় আল্লাহ তো এসব সৃষ্টি করে ক্লান্ত হয়ে যাননি। তাহলে আখিরাতের পুনঃসৃষ্টি অবাস্তব হবে কেন?

আল্লাহর সর্বব্যাপী জ্ঞান ও আমল লিপিবদ্ধকারী ফেরেশতাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে। কিয়ামাতের পরও দুজন ফেরেশতা সাথে থাকবেন যাদের একজন হাশরের মাঠের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবেন, আরেকজন আমলনামা বর্ণনা করবেন। কাফির ও তাকে বিভ্রান্তকারী শয়তান পরস্পরকে দোষারোপ করবে। তাদের ঝগড়া করতে মানা করে জাহান্নামে পাঠানো হবে।

মুত্তাকীদের জন্য জান্নাতের মনোহর বর্ণনা দেয়া হয়।

ফরয সালাত ও নফল তাসবীহ পাঠের হুকুম করা হয়েছে।

৫১। সূরা যারিয়াত, আয়াত ১ থেকে ৩০

সূরা যারিয়াতে অত্যন্ত হৃদয়গ্রাহী ভাষায় আখিরাতের বাস্তবতার কথা তুলে ধরে কাফিরদের অনুমানভিত্তিক কথাবার্তা খণ্ডন করা হয়েছে। মুত্তাকীদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে তাহাজ্জুদ পড়া, সাহরির সময় ইস্তিগফার করা, যাচক ও বঞ্চিতকে দান করার কথা বলা হয়। যে ফেরেশতাগণ ইবরাহীম (আঃ) ও সারা (আঃ) এর বৃদ্ধ বয়সেও ইসহাক (আঃ) এর জন্মের সুসংবাদ নিয়ে এসেছিলেন, তার বৃত্তান্ত বর্ণিত হয়।