‘হুজুর’ শব্দটি কুরআন-হাদীসে আমরা কোথাও পাই না। বাংলাদেশে প্রচলিত অর্থে এই শব্দটি দিয়ে একসময় শুধু মাদ্রাসার আলেম ও তালেবুল এলেম শ্রেণীর মানুষদের বোঝানো হতো। তবে পরবর্তীতে কিছু নির্দিষ্ট ইসলামী চিহ্নধারী সকল মানুষকেই ‘হুজুর’ বলে ডাকা প্রচলিত হয়ে যায়। সেসব ইসলামী চিহ্ন পুরুষদের ক্ষেত্রে দাড়ি, টুপি, পায়জামা, পাঞ্জাবি, জোব্বা ইত্যাদি। নারীদের ক্ষেত্রে বোরকা, আবায়া, হিজাব, নিকাব ইত্যাদি। তার মানে মাদ্রাসা বা জেনারেল শিক্ষিত – যে কেউই এখন ‘হুজুর’ বলে সমাজে পরিচিত হতে পারে।
তো বাহ্যিক এই চিহ্নগুলো ধারণ করা মানুষদের কাছ থেকে স্বভাবতই প্রত্যাশা থাকে যে তারা ইসলামি নিয়ম-কানুন মেনে চলবে, অন্তত অন্য আর দশজনের চেয়ে বেশি। কিন্তু সেই মেনে চলার সীমানাটা কতটুকু, তা নিয়ে আমাদের সমাজ কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। তাই এই হুজুরদের কোনো হালাল বা মুবাহ কাজ করতে দেখলেও অন্যেরা প্রশ্ন করে বসে, “হুজুর হয়ে এই কাজ করছো কেন?”, “হুজুর হয়ে ওটা করছো কেন?” ইত্যাদি। এ ধরনের প্রশ্নের আরেকটি সমস্যা হলো, মানুষ ধরে নিচ্ছে হুজুরদের জন্য একরকম শরিয়ত, অ-হুজুরদের জন্য আরেকরকম শরিয়ত। অথচ “হুজুর হয়ে” যেটা করা হারাম, “মুসলিম হয়ে”ই সেটা করা হারাম। “হুজুর হয়ে” যেটা করা অশোভনীয়, “মুসলিম হয়ে”ই সেটা করা অশোভনীয়। অনলাইনে, ইন্টারনেটে, ফেসবুকে হুজুর শ্রেণীর মাঝে তাই “হুজুর হয়ে” কথাটা একটা খুনসুটির বস্তুতে পরিণত হয়।
সেখান থেকেই “হুজুর হয়ে” নামে একটি ফেসবুক পেজ খোলার ধারণাটা আসে। ফলে ২০১৫ গ্রেগোরি সনে যাত্রা শুরু করে "হুজুর হয়ে" ফেইসবুক পেইজ। কোথাও কোনো শাখা না রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রায় ১ দশক পরে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তৈরি হলো এর ওয়েবসাইট। টেলিগ্রাম চ্যানেলও আছে।
এগুলো পরিচালনা করে আল্লাহর কিছু বান্দা এবং আপনাদের কিছু ভাই, যারা জেনারেল শিক্ষিত। অর্থাৎ আলেম বা তালেবুল এলেম না হয়েও বাহ্যিক চিহ্নগুলোর কারণে ‘হুজুর’ হিসেবে সমাজে পরিচয় লাভকারী।
আমাদের উদ্দেশ্য দ্বীন ইসলামকে সিরিয়াসলি নিতে আগ্রহী ভাইবোনদের উৎসাহ যোগানো, তাদের পথে বাধা দানকারীদের বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে প্রতিহত করা, এবং কিছু হালাল বিনোদন। ইসলাম নিয়ে জেনারেল শিক্ষিতদের যতটুকু কথা বলার অধিকার আছে, সেই সীমা লঙ্ঘন করে আলেমদের সীমানায় অনধিকার পদার্পণ না করার যথাসাধ্য চেষ্টা করা হয়েছে। আক্রমণের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ইসলামবিরোধী আইডিয়াগুলোকেই কেবল লক্ষ্য বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আহলুস সুন্নাহর বৈধ মতপার্থক্যপূর্ণ বা অস্পষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে অযথা পানি ঘোলা করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করা হয়েছে। ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় এর অন্যথা হয়ে থাকলে আমরা তা থেকে তাওবাহকারী। আল্লাহ্ই তাওফিকদাতা।